রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ অর্থ কি তা জানতে পাঠকদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। কারন, ইসলামের প্রধান উপাসনা হল নামাজ। ইসলামের স্তম্ভের মধ্যে ঈমানের পরেই নামাজের স্থান। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় নামাজের নির্দেশ দিয়েছেন। আর পরকালে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম দোয়ার হিসাব কবুল করবেন। নামাজ হলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত অর্জনের একটি ইবাদত।

তাই  আজকের আর্টিকেলে আমরা সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা অর্থ কি, রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ অর্থ এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদা এবং রাব্বানা লাকাল হামদ দুইটাই পড়তে হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা করব। আর্টিকেলটি মনোযোগ পড়লে আপনাদের উপকারে আসবে।  তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক:

নামাজের অন্যান্য অংশ সঠিকভাবে আদায় করলে অতিরিক্ত সওয়াব পাবেন। যার একটি হল রুকু সেজদা থেকে উঠে তাসবীহ পাঠ করা। হাদিসে উল্লেখ আছে-

হজরত রিফাহ বিন রাফে জারকবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করছিলাম। প্রিয়নবী যখন রুকু থেকে মাথা উঠালেন তখন বললেন, ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’। এ সময় তার পেছন থেকে এক ব্যক্তি এসে বলল, অর্থ কি । অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা, অসংখ্য পবিত্রতা এবং বরকতময় প্রশংসা)।

নামায শেষ করে (প্রিয়নবী) বললেন, কে বলেছে যে জিকির? লোকটি বলল, ‘আমি’। তিনি (প্রিয়নবী) বলেন, আমি ত্রিশ জনেরও বেশি ফেরেশতাকে দেখেছি যে, কে প্রথমে জিকির লিখবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। (মুয়াত্তা মালেক, বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ)।

অন্য ভাবে বলা আছে,

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন ইমাম সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তখন ‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদ’ বলুন। কেননা যে ব্যক্তি এ (জিকর) বলে ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যায়, তার অতীতের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

রুকুর পর বলুন- سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) এবং সোজা হয়ে দাঁড়াও। রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো আবশ্যক। আর ‘سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ)’ বলা সুন্নত। কিন্তু এটার মানে কি?

রুকূর পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলুন। একজন প্রার্থনাকারী রুকুতে আল্লাহর মহিমা ও মহিমা প্রকাশ করে। সেখান থেকে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন। দুই প্রশংসার মাঝে একটি ঘোষণা রয়েছে- سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ)। এর অর্থও চমৎকার অর্থ এবং এটি উপাসনায় একাগ্রতার অন্যতম উপাদান।

সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা অর্থ কি

রুকু থেকে উঠে বলি, ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা।’

সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা অর্থ: আল্লাহ সেই ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তঁার প্রশংসা করে।

রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ অর্থ

তারপরই আমরা আবার আল্লাহর প্রশংসা করে বলি, “রাব্বানা লাকাল হামদ, হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ“

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আর সমস্ত প্রশংসা তোমারই জন্য; অঢেল, পবিত্র এবং বরকতময় প্রশংসা।” (বুখারী)

আরো পড়ুন :- রোজা রাখার নিয়ত । ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহ । আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম অর্থ। রোজার সময়সূচি ২০২৪ । স্বপ্নে স্বর্ণ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা । চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া ও আমল । আম্মাবাদ শব্দের অর্থ কি। হাজতের নামাজের দোয়া । যানবাহনে চলাচলের দোয়া

রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদা এবং রাব্বানা লাকাল হামদ দুইটাই পড়তে হবে কি না?

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : “إذا قال الإمام سمع الله لمن حمده فقولوا اللهم ربنا لك الحمد فإن من وافق قوله قول الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه” وفي رواية: فقولوا ربنا ولك الحمد” رواه البخاري ومسلم .

উত্তরঃ হ্যাঁ, দুইটি পড়া সুন্নত। যেমন আল্লাহু আকবার ইমামও বলেন, মুসলমানরাও বলেন। ইমাম সাহেব শুধু সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বলবেন। আর তারপর মুক্তাদি দাড়িয়ে বলবে রাব্বানা লাকাল হামদ। কেউ একাকী নামাজ পড়লে দুটোই পড়বে। এটাই সুন্নত। উত্তর দিয়েছেন: মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি, বাইতুল কুরআন মাদারাসা, মোহাম্মাদপুর।

অন্য ভাবে বলা যায় যে,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي অর্থ তুমি আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় কর। নামাজে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দোয়াটি রুকু থেকে সোজা দাঁড়িয়ে পড়তেন, তা জাগো নিউজে তুলে ধরা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একজন ব্যক্তি সালাত আদায় করবে যতক্ষণ না সে আল্লাহু আকবার বলবে, তারপর রুকু করবে, অতঃপর سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَة বলবে। (আবু দাউদ) অর্থ রুকু করার পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো।

1, তখন তিনি বলতেন

اَللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْد-

উচ্চারণ– আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থাৎ হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার।

2, এর পর তিনি বলতেন

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَذيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ

উচ্চারণঃ “রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ”

অর্থ: “হে আমাদের পালনকর্তা! আর সমস্ত প্রশংসা তোমারই জন্য; অঢেল, পবিত্র এবং বরকতময় প্রশংসা।” (বুখারী)

4, হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন যে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন বলতেন:

اَللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْأَ السَّمَوَاتِ وَمِلْأَ الأَرْضِ, وَمَا بَيْنَهُمَا, وَمِلْأَ مَا شِئْتَ مِنْ شَعْدُ. أَهلَ الثَّناءِ وَالْمَجْدِ, أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ, وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ.

উচ্চারণ: মিল’আস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিলাল আরদি ওয়ামা বায়নাহুমা, ও মিল’আ মা শি’তা মিন শায়ীন বা’দু, আহলাস সানা-ই ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল ‘আব্দু, ওয়া কুল্লুনা লাকা’ আবদুন , আল্লাহ-হুম্মা লা মানিআ লিমা আতওয়াইতা, ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়ালা ইয়ানফায়্যু জাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু)।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আসমানকে পূর্ণ করে, পৃথিবীকে এবং তাদের মধ্যবর্তী বস্তুকে পরিপূর্ণ করে দেয় (এছাড়াও পূর্ণ করে) এবং তার পরে যা পূর্ণ করতে চান তা পূর্ণ করেন। হে প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী! সবচেয়ে সঠিক উক্তি। বান্দা হল- আর আমরা সবাই তোমার বান্দা- হে আল্লাহ, তুমি যা দিয়েছ তা বন্ধ করার কেউ নেই, আর তুমি যা আটকিয়ে রেখেছ তা দেওয়ার কেউ নেই।আর কোন ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির কোন কাজে আসবে না। আপনি.” (মুসলিম, মিশকাত)

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)  আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামীদা) বলেন, তোমরা তখন اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ) বলবে। কেননা, যার বাক্য ফিরিশতাদের বাক্যের অনুরূপ হবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে।

ইমাম ও মুক্তাদী উভয়েই সামি আল্লা-হু লিমান হামিদাহ ও আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হামদ বলবে।

সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা এর ফজিলত

যে ব্যক্তি রুকু থেকে মাথা তুলছে,

” সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা” বলার পর।

“রাব্বানা লাকাল হামাদ বলেন, 30 জন ফেরেশতা তার পুরস্কার লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করে।” সহীহ বুখারী-760

অতঃপর আমরা রুকু থেকে উঠে বলি,

“সামি আল্লাহু লিমান হামিদা” অর্থ আল্লাহ যাকে প্রশংসা করেন আল্লাহ তাকে কবুল করেন (বুখারী ও মুসলিম);

এরপর আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং বলি, ‘আল্লাহুম্মা ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ অর্থ হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তোমারই (বুখারী ও মুসলিম)

অবশেষে…

আমরা নামাযের রুকু করার পর তাড়াহুড়ো করে সেজদায় যাই না, বরং উল্লিখিত দোয়াগুলো পড়ে ধীরে ধীরে সেজদায় যাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধীরে ধীরে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

শেষ কথা

প্রিয় দর্শক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা অর্থ কি, রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ অর্থ, রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদা এবং রাব্বানা লাকাল হামদ দুইটাই পড়তে হবে কি না তা নিয়ে আলোচনাকরেছি। আশা করি আর্টিকেলটা বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না এবং আপনারাও উপকৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে করুন। শীঘ্রই আপনার কমেন্ট মূল্যায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।

আরো পড়ুন :- রোজা রাখার নিয়ত । ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহ । আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম অর্থ। রোজার সময়সূচি ২০২৪ । স্বপ্নে স্বর্ণ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা । চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া ও আমল । আম্মাবাদ শব্দের অর্থ কি। হাজতের নামাজের দোয়া । যানবাহনে চলাচলের দোয়া

Tag: সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা অর্থ কি, আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ অর্থ, রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ অর্থ কি, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা রাব্বানা লাকাল হামদ অর্থ কি, রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদা, রাব্বানা লাকাল হামদ দুইটাই পড়তে হবে কি না, Rabbana lakal hamad hamdan kasiraan tayiban mubarakan fih, biborun.com