আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ

আল্লাহ তালার সুন্দর সুন্দর গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে একটি হলো “জুল জালালি ওয়াল ইকরাম”। অনেকের মতে এটি ইসমে আজম বা বড় নাম। কেননা এটি রুবুবিয়্যাহ ও উলুহিয়্যার সমস্ত গুণাগুণকে শামিল করেছে। জালাল শব্দের অর্থ মর্যাদাবান এবং ইকরাম অর্থ সম্মানিত।আল্লাহর বড়ত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে যেসকল নামে ডাকা হয় সেগুলোকে বলে ইসমে আজম। এই দুই শব্দের মধ্যে ‘ইসম’ অর্থ হলো নাম আর ‘আজম’ অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। তাই আজকে এই পোস্টে আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ এবং ফজরের নামাজের পর তাসবিহ নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে প্রতিবেদনটি শুরু করা যাক:

আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ, ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর ফজিলত কি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল, ইকরাম ১০০ বার পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ১১ বার পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম কিসের দোয়া, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর আরবি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম সঠিক উচ্চারণ, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম,  Allahumma Ya Jal Jalali Wal Ikram, biborun.com

আল্লাহর এই নামটি কুরআনে  এসেছে দুইবার সূরা আর রাহমানের ২৭ নম্বর ও ৭৮ নম্বর আয়াতে। ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক, যিনি সৃষ্টিকুল হতে ভয় পাওয়ার হকদার ও একমাত্র প্রশংসার যোগ্য, মহত্ব, বড়ত্ব,দয়া ও ইহসানের অধিকারী। আজকে আমরা জানবো ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম জিকিরের ফজিলত।

আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর ফজিলত

‘জুল জালালি ওয়াল ইকরাম’ মহান আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর একটি। তবে আল্লাহকে ডাকার সময় এই নামের আগে যখন ‘ইয়া’ যুক্ত হবে তখন বলতে হবে ‘যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’। এভাবে ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ অর্থাৎ ‘হে মহা মর্যাদাবান ও মহা সম্মানিত’ বলে ডাকতে হবে।

এই নাম পাঠের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয় নবীজি (সাঃ) একটি হাদিসে বলেছেন –  ‘তোমরা সবসময় ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ পাঠ করাকে অপরিহার্য করে নাও (তিরমিজি : ৩৫২৫)। অর্থাৎ সদা সর্বদা এই নাম পাঠ করার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ আদায়ের পরে বসা অবস্থায় বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালী ওয়াল ইকরাম।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আপনি সালাম (শান্তি নিরাপত্তা প্রদানকারী), আপনার পক্ষ থেকেই সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা) আসে। আপনি বরকতময়, হে মহিমময় মহানুভব।’ (মুসলিম : ৫৯১-৫৯২)

সুন্নাহ মতে প্রতিটি নামাজের পর ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।একবার  আনাস (রাঃ) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে বসা ছিলেন। তখন ঐখানে এক ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করল এবং এই দোয়াটি পাঠ করল-‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা-ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।’

ঐ সময় রাসুল (সাঃ) বললেন, ‘তুমি আল্লাহর দরবারে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করেছ,যে নামে ডাকলে মহান আল্লাহ সাড়া দেন এবং কিছু চাইলে তা দান করেন।’ (সুনানে তিরমিজি : ৩৫৪৪, আবু দাউদ ১৪৯৫, নাসাঈ, ১৩০)।

আবুল হাসান আশআরি (রহ.) ও ইমাম আবু জাফর তাবারি (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলার প্রতিটি গুণবাচক নামই ইসমে আজমের অন্তর্ভুক্ত। যদি কোন ব্যক্তি এটি নিয়মিত পাঠ করে,তবে আল্লাহ তাআলা এর আমলকারীর দুনিয়া ও পরকালের সব কাজ-কর্ম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেবেন।

আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ

ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ সমস্ত সৃষ্টি জগতের অধিপতি, যিনি সৃষ্টিকুল থেকে ভয় পাওয়ার হকদার ও একমাত্র প্রশংসার যোগ্য, মহত্ব ও বড়ত্ব এবং দয়া ও ইহসানের অধিকারী। এই আর্টিকেলে ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ফজিলত সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস আলোচনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন: “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” এই দুআটি কখন পাঠ‌ করতে হয়? এবং তা পাঠের মর্যাদা ও উপকারিতা কী?

উত্তর: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

عن ثوبان رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا وقال اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام. قيل للأوزاعي وهو أحد رواة الحديث كيف الاستغفار؟ قال : يقول : أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله. رواه مسلم

প্রখ্যাত সাহাবি সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন (অর্থাৎ সালাম ফেরাতেন) তখন তিনবার পাঠ করতেন, আসতাগফিরুল্লাহ।

(অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি)।

অত:পর পাঠ করতেন:

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ

আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম তাবারকতা ইয়াযাল জালালি ওয়াল ইকরাম।”

(অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি শান্তি দাতা। শান্তি অবতীর্ণ হয় আপনার পক্ষ থেকেই। আপনি মহত্ব ও মর্যাদার অধিকারী)।

বর্ণনাকারী আউযায়ীকে প্রশ্ন করা হলো, কীভাবে ইস্তিগফার পাঠ করতে হয়? তিনি বললেন, (এভাবে বলবে), “আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ।” [সহিহ মুসলিম, হা/ ১৩৬২]

এই দুআ পাঠের উপকারিতা:

▪️. হাদিসের ভাষা থেকে এটা স্পষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করার পর তিনবার ইস্তিগফার, অতঃপর উপরোক্ত দুআটি নিয়মিত পাঠ করতেন।

এ হাদিসের প্রতি আমল করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ এবং তাঁর একটি সুন্নতের উপর আমল করা হয়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ এবং সুন্নাতের উপর আমল করা আল্লাহর ভালোবাসা, ক্ষমা এবং নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।

▪️. আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের উপরে আমল করা তাঁর প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ

এবং গভীর ভালোবাসার প্রমাণ। এই ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।

▪️. এটি আল্লাহর মর্যাদার স্বীকৃতি জ্ঞাপক ও স্তুতি মূলক বাক্য। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

▪️. সালাতের পরে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার পর এই দুআটি পড়লে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো মোচন করবেন। পাশাপাশি, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জীবনে সুখ, শান্তি, দয়া ও বরকতের ফল্গুধারা নেমে আসবে। কারণ আল্লাহর একটি নাম হল, “আস সালাম” (শান্তি দাতা)। আর তার পক্ষ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়।

▪️. যেকোনো দুআ ও জিকির পাঠের মাধ্যমে মুখ ও জিহ্বাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করা হয়। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا بِذكر اللَّهِ

“তোমার জিহবা যেন সর্বদা আল্লাহর জিকির দ্বারা তরতাজা থাকে।” [সহীহ, তিরমিযী, হা/ ৩৩৭৫, ইবনে মাজাহ, হা/ ৩৭৯৩]

▪️. আল্লাহর জিকির অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে। ‌ আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَىِٕنُّ ٱلۡقُلُوبُ

“জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়।” [সূরা রাদ: ২৮]।

– উল্লেখ্য যে, এ হাদিসে ফরজ সালাত শেষে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট (একবার আল্লাহু আকবার পড়ার হাদিসের তুলনায়)। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

মহান রাব্বুল আলামীন যেন মুসলিম উম্মাহকে তাঁর এ সুন্দর গুণবাচক নাম আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর ফজিলত জেনে নিয়মিত আমল করার তাওফিক দান করেন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।

শেষ কথা

প্রিয় দর্শক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমরা আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ, ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর ফজিলত কি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল, ইকরাম ১০০ বার পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ১১ বার পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম কিসের দোয়া, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম পড়লে কি হয় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটা বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না এবং আপনারাও উপকৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে করুন। শীঘ্রই আপনার কমেন্ট মূল্যায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।

আরো পড়ুন :- রোজা রাখার নিয়ত ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহআল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম অর্থরোজার সময়সূচি ২০২৪স্বপ্নে স্বর্ণ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ওয়াস সালাতু আরবি অর্থ হাজতের নামাজের দোয়া যানবাহনে চলাচলের দোয়া

tag: আল্লাহুম্মা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর অর্থ, ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর ফজিলত কি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল, ইকরাম ১০০ বার পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম ১১ বার পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম কিসের দোয়া, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম পড়লে কি হয়, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর আরবি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম সঠিক উচ্চারণ, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম,  Allahumma Ya Jal Jalali Wal Ikram, biborun.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top