আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা এর অর্থ কি

আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা: আমরা অনেকেই বিভিন্ন সময়ে ঋণগ্রস্ত হই। এই ঋণ সত্যিই কারো জীবনে সুখের খবর নয়। আর তাই জীবনে সবসময় ঋণমুক্ত থাকা উচিত। ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাদিস শরীফে দুটি বিশেষ ও কার্যকর দোয়া বর্ণিত হয়েছে।ইসলাম আমাদের জীবনের সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং সেগুলোর উপযুক্ত সমাধানও দিয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।

ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে কি মহান উপদেশ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম; যে ঋণ ভালোভাবে শোধ করে।’ ঋণ পরিশোধে যেন কেউ দেরি না করে, নবীজি বলেন, ‘যে ঋণ পরিশোধ করে না তারা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কেউ যদি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তাহলে তার কী করা উচিত?  ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল এবং কিভাবে  ঋণ থেকে বাঁচার জন্য  আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয় এ নিয়ে আজকের আর্টিকেল আলোচনা করব তাহলে চলুন শুরু করা যাক:

আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালা লিকা আন হারামিকা, ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া, Allahumma akfini bi halalika an haramika, biborun.com

পৃথিবীর সমস্ত বোঝার মধ্যে ঋণের বোঝা সবচেয়ে ভারী। অতিরিক্ত ঋণের কারণে মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। কখনো কখনো এই অস্থিরতা বিষণ্নতায় পরিণত হয়। আর ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে সৃষ্ট এই তীব্র হতাশা অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজে ঠেলে দেয়।

সময়মতো পরিশোধ না করলে ঋণের বোঝা আরও ভারী হয়ে যায়। সাধ্যের বাইরে ঋণ গ্রহণ ইসলামে নিষিদ্ধ। তবে ঋণগ্রহীতার ঋণ মাফ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য আখেরাতে বিরাট সওয়াব রয়েছে।

হাদিসে ঋণমুক্তির জন্য বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এই দোয়াগুলো খুবই কার্যকরী। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার পাশাপাশি, যদি কেউ নামাজগুলো ভালোভাবে মুখস্থ করে এবং নিয়মিত আদায় করে, আল্লাহ ইচ্ছা করেন তাহলে ঋণমুক্ত হওয়া সম্ভব।

একদিন হজরত আলী (রা.)-এর নিকট এক চুক্তিবদ্ধ দাস এসে বলল, আমি চুক্তির অর্থ আদায়ে অক্ষম, আপনি আমাকে সাহায্য করুন। হজরত আলী (রা.) বললেন, আমি কী তোমাকে এমন কিছু (দোয়া) বাক্য শিখিয়ে দেব- যেগুলো নবী করিম (সা.) আমাকে শিখিয়েছিলেন? (এগুলো পাঠ করলে) তোমার ওপর যদি পাহাড় পরিমাণ ঋণও থাকে আল্লাহতায়ালা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দিবেন।

ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার দোয়া

একবার চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়। এ সময় আলী (রা.) তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।

এরপর আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে বলেছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৩২১)

اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।

অর্থ : হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী কোরো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।

আর একটি দোয়ার কথা হাদিসে এসেছে,

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা।

রসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে?

আবু উমামা বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তায়ালা তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন।

তিনি বলেন, জি হ্যাঁ ইয়া রসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিম্নের দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।

আবু উমামা বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন।

দোয়াটি হলো

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।

বাংলা অর্থ:‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। – সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৮৯৩।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ঋণমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। (আমিন )

আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালা লিকা আন হারামিকা, ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া, Allahumma akfini bi halalika an haramika, biborun.com

আরো পড়ুন :- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতুল ফেরদাউসআল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি আরবি  । জাহান্নাম থেকে আশ্রয় এবং জান্নাত চাওয়ার দোআ

ঋণমুক্ত হওয়ার দোয়া আমল

একবার ঋণ থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনারত অবস্থায় এক ব্যক্তি তাকে দেখে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঋণ থেকে খুব বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন!’ নবি (সা.) বলেন- ‘মানুষ ঋণী হলে, কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে, রক্ষা করে না। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ২৩৯৭)

প্রায় সময় রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলতেন

اللهم إني أعوذ بك من الكسل والهرم والمأثم والمغرم

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা! ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মা’ছামি, ওয়াল মাগরামি।

অর্থ:  হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি, হাদিস : ৬০০৭)

ঋণমুক্ত থাকলে যে দোয়া পড়বেন

সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দুশ্চিন্তার সময় নিম্ন বর্ণিত দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইনি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া দ্বালা‘য়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”

ঋণমুক্ত থাকতে রাসুল (সা.) যে দোয়া করতেন

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) এভাবে দোয়া করতেন ও বলতেন—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসলি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া গালাবাতিদ দাইনি, ওয়া কাহরির রিজাল।’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুশ্চিন্তা, অপারগতা-অলসতা, কৃপণতা এবং কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অধিক ঋণ থেকে ও খারাপ লোকের জবরদস্তি থেকেও আশ্রয় চাচ্ছি। (নাসায়ি, হাদিস : ৫৪৭৮)

এ দোয়াগুলো নিয়মিত করলে আল্লাহ তাআলা শিগগির ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। আর্থিকভাবে সচ্ছলতা  ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন।

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা কফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক। অর্থ : হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী কোরো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।

শেষ কথা

প্রিয় দর্শক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমরা আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটা বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না এবং আপনারাও উপকৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে করুন। শীঘ্রই আপনার কমেন্ট মূল্যায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।

আরো পড়ুন :- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতুল ফেরদাউসআল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি আরবি  । জাহান্নাম থেকে আশ্রয় এবং জান্নাত চাওয়ার দোআ

Tag: আল্লাহুম্মা আকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া, Allahumma akfini bi halalika an haramika, biborun.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top