মহান আল্লাহর কাছে চেহারার কোনো মূল্য নাই। আপনি কালো কিংবা সাদা তার বিচার হবে না, আল্লাহ তা আলা আপনার চরিত্র দেখবেন। তবে যাই হোক আমরা কিন্তু সবাই সুন্দরের পূজারী। কে না চায় সুন্দর হতে। সুন্দর হতে সবাই চায়। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে সর্বোৎকৃষ্ট অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে সর্বোচ্চ সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করছি (সুরা তিন, আয়াত : ০৪) স্বভাবতই মানুষ আয়না দেখে। আয়না দেখা ও পরিপাটি থাকা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। আয়না দেখার সময় কী দোয়া পড়তে হয়- এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। একটি হাদিসে চেহারা সুন্দর করার একটি দোয়া আছে। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা তাই আজকে এই পোস্টে আমরা চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া এবং চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির আমল নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক:
ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যার পরোতে পরোতে রয়েছে শৃঙ্খলা। যা মানুষকে আগামীদিনের পথ চলতে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকূলের সেরা আশরাফুল মাকলুকাত খ্যাত মানুষ। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দর থেকে সুন্দরতম অবয়ব দিয়ে। এক হাদিসে আছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সুন্দর,সৌন্দর্য তিনি পছন্দ করেন।
মানুষ হিসেবে আমরাও সৌন্দর্যকে ভালোবাসি। সুন্দর হতে চাই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে রূপের সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য নয় । বরং ইমান এবং আমলে সৌন্দর্যই প্রকৃত সৌন্দর্য। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন
إِنَّ الله لا يَنْظُرُ إِلى أَجْسامِكْم، وَلا إِلى صُوَرِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ ” رواه مسلم.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দেহাবয়ব এবং রূপের সৌন্দর্য দেখেন না। তিনি দেখেন তোমাদের হৃদয়ের সৌন্দর্য কাজেই আমাদের উচিত চেহারার সৌন্দর্যের প্রতি অধিক মনোনিবেশ না করে অত্মিক সৌন্দর্য হাসিলে ব্রতী হওয়া আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।
চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া ও আমল
এতদসত্ত্বেও কিছু কিছুআমল আছে যেগুলো করলে অত্মিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে দৈহিক এবং চেহারার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। সেগুলো হলো আমরা যখন নিজের চেহারা আয়না দেখি, তখন আল্লাহর শুকরিয়া ,
১. ইসলামী শরিয়তের এহতেমাম করা।
২. হালাল হারাম বিচার করে চলা।
৩. নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ পুরুষ হলে জামাতে নারী হলে ঘরে আদায় করা
৪. সদা পর্দাপুশিদার সাথে চলা।
৫.নিয়মিত জিকির করা।
৬. মেসওয়াক করা।
৭. সর্বদা সুন্নতী জিন্দেগীর প্রতি যত্নশীল হওয়।
এছাড়াও হাদিস শরিফে একটি দোয়া আছে যা প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর পড়া উচিত। বিশেষত আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সময় নিচের এই ছোট্ট দোয়াটি পাঠ করা।
চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া
اللهم أَحسَنْتَ خَلْقي فأَحْسِنْ خُلُقي
দোয়াটি: উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা আহসান্তা খালক্বি, ফা আহসিন খুলুক্বি।
অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আপনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করে দেন।
প্রত্যেক বান্দার উচিত কুরআন হাদিসের শিখানো দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়না দেখতেন তখন তিনি বলতেন–
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي حَسَّنَ خَلْقِي وَخُلُقِي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি হাসসানা খালক্বি ওয়া খুলুক্বি; ওয়া যানা মিন্নি মা শানা মিন গাইরি।
অর্থ : আল্লাহর শোকরিয়া, যিনি আমার চেহারা ও আচরণে সৌন্দর্য দিয়েছেন এবং আমাকে অন্য কারো অসৌন্দর্য থেকে রক্ষা করে সুন্দর করেছেন। (আবু ইয়ালা, হাদিস : ২৬১১)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন, তখন তিনি বলতেন–
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَوَّى خَلْقِي فَعَدَلَهُ ، وصَوَّرَ صُورَةَ وَجْهِي فَحَسَّنَهَا، وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি সাওয়া খালক্বি ফাআদালাহু, ওয়া সাওয়ারা সুওরাতা ওয়াজহি ফাহাসসানাহা, ওয়া জাআলানি মিনাল মুসলিমিন।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে ন্যায়সঙ্গতার সঙ্গে পূর্ণতা দিয়েছেন। আমার মুখাবয়ব সুন্দরভাবে তৈরি করেছেন এবং আমাকে মুসলিম বানিয়েছেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) হাতে আয়না নিয়ে তাতে তাকিয়ে বলতেন,
الحمد لله ، أكمل خلقي ، وحسن صورتي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আকমালা খালক্বি, ওয়া হাস্সানা সুওরাতি, ওয়া যানা মিন্নি মা শানা দত গাইরি।
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার অঙ্গ-সৌষ্ঠবের পূর্ণতা দিয়েছেন এব আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন। অন্যের অসুন্দরতা থেকে আমাকে রক্ষা করে সৌন্দর্য দিয়েছেন। (জাওয়ায়েদুজ জুহদ : ১১৭৪)
আয়নায় মুখ দেখাবিষয়ক যেসব দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে হাদিসশবিশারদের মতামত রয়েছে। তারা হাদিসগুলো নির্ণয় করে বেশ কিছুকে দুর্বল হাদিস সাব্যস্ত করেছেন। তবে আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস অনুসরণে অসুবিধা নেই।
মানুষের চেহারা প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা
আরো পড়ুন :- রোজা রাখার নিয়ত । ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহ । আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম অর্থ। রোজার সময়সূচি ২০২৪ । স্বপ্নে স্বর্ণ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা । আসসালাতু আসসালামু আলা রাসুলিহিল কারিম অর্থ কি । আম্মাবাদ শব্দের অর্থ কি। হাজতের নামাজের দোয়া । যানবাহনে চলাচলের দোয়া
চেহারা নিয়ে অবজ্ঞা নিষিদ্ধ
চেহারা মানবদেহের প্রধান একটি অঙ্গ। সুন্দর চেহারার প্রশংসায় সবাই খুশি হয়।
আবার নিন্দা করলে অনেক কষ্ট পায়। মানুষের চেহারা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার কারো নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বোলো না! আল্লাহ তার চেহারা কুৎসিত বানিয়েছেন। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৫)
চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ
আল্লাহ মানুষের চেহারা আকর্ষণীয় ও সম্মানিত করেছেন। ইসলামী শরিয়ত চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ করেছে।
নবী করিম (সা.) বলেন, তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২)
এমনকি শিশুদের শাসন করার সময়ও চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ অন্য কাউকে শাস্তি প্রদান করে, তখন সে যেন তার চেহারায় আঘাত না করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৯৩)
যুদ্ধক্ষেত্রেও চেহারায় আঘাত নয়
ইসলাম সাধারণ অবস্থার মতো যুদ্ধক্ষেত্রেও চেহারায় আঘাত করতে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা থেকে বিরত থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৫৯)
সৌন্দর্য বর্ধনে চেহারায় পরিবর্তন
শরীর আল্লাহর দেওয়া একটি আমানত। তাতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের অধিকার মানুষের নেই। তাই নিছক সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মানুষের চেহারা পরিবর্তন করা বৈধ নয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে চেহারায় সার্জারি করা জায়েজ আছে। আবদুর রহমান বিন তুরফা (রহ.) বলেন, কিলাবের যুদ্ধের সময় তাঁর দাদা আরফাজা বিন আসাদ (রা.)-এর নাক কাটা যায়। তিনি একটি রুপার নাক তৈরি করে নিলে তা থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকে। তখন তিনি নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশে একটি সোনার নাক তৈরি করে নেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৩২)
হাদিস থেকে বোঝা যায়, আগুনে পোড়া, এসিড দগ্ধ হওয়া কিংবা অ্যাকসিডেন্টে চেহারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে স্বাভাবিক করার অবকাশ আছে।
চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত
নারীদের চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের এক অংশ তাদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়। এটা সর্বাধিক সঠিক নিয়ম। যাতে তাদের চিনে নেওয়া যায় এবং তাদেরকে কষ্ট দেওয়া না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’ (সুরা : আল আহজাব, আয়াত : ৫৯)
আল্লাহ সুরা নুরে (৩০ ও ৩২ আয়াতে) নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি নত রেখে চলার বিধান দিয়েছেন। আয়াতদ্বয়ে চোখ ও যৌনাঙ্গ হেফাজতের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা চোখের দৃষ্টির লাগামহীনতা বেশির ভাগ অশ্লীলতার প্রধান উৎস। তবে অনিচ্ছাকৃত হঠাৎ দৃষ্টির ব্যাপারে শরিয়তে ছাড় রয়েছে। আলী (রা.) রাসুল (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। রাসুল (সা.) বলেন, হে আলী! অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি পড়ে গেলে পুনরায় তুমি দৃষ্টি দিয়ো না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য, কিন্তু পুনরায় দৃষ্টিপাত করা তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৭৭)
আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে দ্বীন মেনে চলার তাওফিক দান করুন (আমিন)
শেষ কথা
প্রিয় দর্শক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমরা চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া, চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির আমল, মানুষের চেহারা প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটা বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না এবং আপনারাও উপকৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে করুন। শীঘ্রই আপনার কমেন্ট মূল্যায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।
Tag: চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোয়া, চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধির আমল, মানুষের চেহারা প্রসঙ্গে ইসলামের নির্দেশনা, ceharar sondorjo bidhir doya, biborun.com