নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম : কোনো কিছু চাওয়ার আগেই আল্লাহর প্রশংসা এবং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওপর দরূদ পাঠ করে ধিরস্থিরভাবে নিজের প্রয়োজনের কথা আল্লাহর কাছে তুলে ধরা। তাতে দোয়া দ্রুত কবুল হয়। এ রকমই বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তবে প্রয়োজন তুলে ধরার আগে আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর দরূদ পড়ার কথাও বলেছেন তিনি। বলেছেন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম অর্থ এবং যেভাবে দোয়া করলে দ্রুত কবুল হবে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব । আর কথা না বাড়িয়ে চলুন তাহলে প্রতিবেদনটি শুরু করা যাক:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি একমাত্র তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতিত প্রকৃত কোনো মাবুদ নেই। তুমি একক নিরপেক্ষ মুখাপেক্ষিহীন। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। তার সমকক্ষ কেউ নেই।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অবশ্যই সে আল্লাহকে এমন নামে ডেকেছে যে নামে চাওয়া হলে দেয়া হয়। প্রার্থনা করা হলে কবুল করা হয়।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, বুলুগুল মারাম)
সুতরাং মানুষ যখন আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইবে কিংবা দোয়া ও মোনাজাত করবে, তখন তারা আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পাঠ করে তার পর কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের আবেদন করবে।
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম এর অর্থ কি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দোয়া করতেন তখন এভাবে আল্লাহর প্রশংসা করতেন-
اِنَّ الْحَمدَ للهِ نَحْمَدُهُ وَ نَسْتَعِيْنُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَ مَنْ يُّضْلِلْ فَلَا هَادِىَ لَهُ وَ أَشْهَدُ أَنْ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ
উচ্চারণ : ইন্নাল হামদা লিল্লাহি নাহমাদুহু ওয়া নাসতায়িনুহু মাই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লা লাহু ওয়া মাই ইয়ুদলিল ফালা হাদিয়া লাহু ওয়া আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’ (মুসলিম, মিশকাত, তিরমিজি, আবু দাউদ)
যারা দোয়ার সময় এটি পড়তে পারবে না তারা চাইলে ছো্ট্ট এ প্রশংসা করতে পারেন। আর তাহলো-
نَحْمَدُهُ وَ نُصَلِّىْ عَلَى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ
উচ্চারণ : নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম
সম্ভব হলে দোয়া করার আগে দু রাকাআত নামাজ পড়ে দোয়া করা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি তা বর্ণনা করেন। এক বর্ণনায় এসেছে-
‘মানুষ কোনো গোনাহ করার পর উত্তমভাবে ওজু করে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন।’ (আবু দাউদ)
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম । আম্মা বা’দ।
এই উক্তি একটি ইসলামী সম্মানজনক মন্ত্র যা আরবি ভাষায় লিখা হয়েছে। এর বাংলা অনুবাদ হল: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, পৃথিবীর রব্বের যিনি তিনি তাঁর অসংখ্য করুণাময় দরবারে সমস্ত প্রশংসা সম্পাদন করেন। আমরা তাঁকে সমস্ত প্রশংসা জানাই এবং তাঁর পবিত্র রসূল এবং তাঁর পরিবার ও অনুসরণকারীদের উপর সমস্ত সলাম ও সম্মান জানাই।
অতঃপর–
আলহামদুল্লিাহি ওয়াহদাহু ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা মান লা নাবিয়্যা বাদাহু।
অর্থ– সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর।তিনি এক ও অদ্বিতীয়। এবং সালাত ও সালাম ঐ নবীর উপর, যার পর আর কোনো নবী নেই।
আরো পড়ুন :- রোজা রাখার নিয়ত । ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহ । আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম অর্থ। রোজার সময়সূচি ২০২৪ । স্বপ্নে স্বর্ণ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা । যেভাবে দোয়া করলে দ্রুত কবুল হবে । আম্মাবাদ শব্দের অর্থ কি। হাজতের নামাজের দোয়া । যানবাহনে চলাচলের দোয়া
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
পবিত্রতা ও মহিমা সেই মহান সত্তার, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম থেকে (জেরুজালেমের) মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত– যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি– তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।
আল্লাহ তাআলা এই আয়াত শুরু করেছেন سُبْحَانَ শব্দ দিয়ে। আমরা যখন আশ্চার্যান্বিত বা বিস্ময়কর কোন ঘটনা শুনি বা দেখি তখন আমরা বলি سبحان الله। আল্লাহ তাআলা এই শব্দ দ্বারা আয়াত শুরু করে এটাই বুঝাচ্ছেন যে আমি বিস্ময়কর এক ঘটনা বর্ণনা করছি।
ইসরা বলা হয় রাত্রিকালীন ভ্রমণকে। এর ব্যবহার কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় এসেছেÑ فَأَسْرِ بِعِبَادِي لَيْلًا إِنَّكُمْ مُتَّبَعُونَ
ইসরা শব্দের অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। এরপরও আয়াতে لَيْلاً (রাত) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে রহস্যের ভিত্তিতে। প্রথম لَيْلاً বা রাত শব্দ নাকারাহ বা অনির্দিষ্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর আরবী ভাষায় অনির্দিষ্ট হিসেবে ব্যবহৃত শব্দ-শব্দপ্রয়োগের একাংশের অর্থ প্রকাশও করে থাকে, অর্থাৎ لَيْلاً বা রাত শব্দটি উল্লেখ করে রাতের আংশিক সময়কে বুঝান হয়েছে। অতএব মিরাজ সারা রাত্রব্যাপী হয়নি, বরং রাতের সংক্ষিপ্ত সময়ে মি‘রাজে নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম র মত এক সুবিশাল ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহর প্রশংসা ও বিশ্বনবির ওপর দরূদ পাঠ করে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। সম্ভব হলে দোয়ার আগে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সুতরাং, নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম এই বাক্যটি একটি ইসলামী দোয়ার অংশ, যা সাধারণত বক্তৃতা, খুৎবা বা ইসলামী অনুষ্ঠান শুরুর আগে বলা হয়। এর অর্থ হলো:
“আমরা আল্লাহ্র প্রশংসা করি এবং তাঁর সম্মানিত রাসুলের (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি দরুদ (আশীর্বাদ) পাঠাই।”
এটি আল্লাহ্র প্রশংসা ও নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
শেষ কথা
প্রিয় দর্শক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমরা হমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম, যেভাবে দোয়া করলে দ্রুত কবুল হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটা বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না এবং আপনারাও উপকৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে করুন। শীঘ্রই আপনার কমেন্ট মূল্যায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।
আরো পড়ুন :- রোজা রাখার নিয়ত । ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহ । আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম অর্থ। রোজার সময়সূচি ২০২৪ । স্বপ্নে স্বর্ণ দেখলে কি হয় ইসলামিক ব্যাখ্যা । যেভাবে দোয়া করলে দ্রুত কবুল হবে । আম্মাবাদ শব্দের অর্থ কি। হাজতের নামাজের দোয়া । যানবাহনে চলাচলের দোয়া
tag: নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম, যেভাবে দোয়া করলে দ্রুত কবুল হবে, Nahmadhu wa Nusalli ala Rasulihil Kareem, biborun.com