প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

কোনো কারণে প্রস্রাবের সমস্যা হলে তা থেকে আরও অনেক রোগ দেখা দিতে পারে। কারণ প্রস্রাব আমাদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে, শরীরের সমগ্র কার্যকলাপ প্রভাবিত হয়। অনেকের প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হয়। শুরুতে মনোযোগের অভাবে পরে এই সমস্যা বাড়ে। তাই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দ্রুত ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করা উচিত।

মূত্র কিডনি থেকে পানি দ্বারা উত্পাদিত হয়। প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে, শরীরের সমস্ত মলমূত্র এর মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এটি আমাদের সুস্থ থাকা সহজ করে তোলে। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস প্রস্রাবের পুরো প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে জ্বালা ও ব্যথা হয়। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে উভয়কেই সতর্ক থাকতে হবে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অনুসরণ করতে পারেন।

প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকের নিবন্ধে আমরা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন। তো চলুন নিবন্ধটি শুরু করা যাক:-

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ, প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা, proshabe jalapora goroya cikisha,  biborun.com

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ 

বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। একেকজনের একেক কারণে এই ইনফেকশনটি হয়। চলুন জেনে নেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার বিভিন্ন কারণগুলো সম্পর্কে।

বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিটি ব্যক্তির এই সংক্রমণের জন্য আলাদা কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নিই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে।

১) প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার প্রধান কারণ পর্যাপ্ত পানি পান না করা। পানি আমাদের শরীরের বেশিরভাগ রোগ সারাতে সাহায্য করে। অপর্যাপ্ত পানি শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সাধারণত যারা পর্যাপ্ত পানি পান করেন না তাদের মধ্যে ঘটে।

2) মহিলাদের ক্ষেত্রে, এই ঘটনাটি খুব বেদনাদায়ক। মহিলাদের মলদ্বারের খুব কাছে মূত্রনালী অবস্থিত। ফলে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক মলদ্বার দিয়ে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং জ্বালা সৃষ্টি করে।

3) মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার আরেকটি কারণ হল মাসিক বা পিরিয়ড। প্রতি মাসে মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড হয়। সবাই তখন ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার করে। সেই ন্যাপকিন বা কাপড় দিয়েও জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

লেবুপান পানি করুন: লেবুর রস মিশিয়ে পানি পান করা শরীরের জন্য ভালো। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সমস্যায় লেবু পানি পান করলে অনেক উপকার পাবেন। প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। লেবুর রস কতটা খাবেন? এক চা চামচ মেশানো যথেষ্ট। এভাবে কয়েকদিন পান করলে সমস্যা কমে যাবে। কারণ লেবুর রসে ভিটামিন সি থাকে। এটি সব ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়াও এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ।

ডাবের পানি পান করুন: ডাবের পানি আমাদের শরীরের নানাভাবে উপকার করে। এটি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া উপশম করতে বিশেষভাবে ভাল কাজ করে। ডাবের পানি পান করলে এর মাধ্যমে প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট শরীরে প্রবেশ করে। এই উপাদানটি আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কাজ করে। এছাড়াও সুস্থ রাখে। তাই নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন। ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অনুসরণ করার পরে যদি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া না কমে তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

আমলকির রস: পুষ্টিবিদ রুজুতা দিওয়েকারের মতে, ইউটিআই-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের আমলা এবং বেলের শরবত পান করা উচিত। এই পানীয়গুলিতে উপস্থিত প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, ইলেক্ট্রোলাইট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্রাবের সমস্যা নিরাময় করে। তবে মনে রাখবেন, ইউটিআই সমস্যা হলে এই পানীয়গুলি সন্ধ্যার আগে গ্রহণ করা উচিত।

শসার রস খান: প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমানোর আরেকটি কার্যকরী উপায় হল শসার রস খাওয়া। শসার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কাজ করে। শসার সালাদও খেতে পারেন। তবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে চাইলে শসার রস তৈরি করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। প্রথমে শসার রস তৈরি করে তাতে সামান্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার এই জুসটি পান করুন। এভাবে দিনে একবার খেলে সমস্যা দ্রুত চলে যাবে।

জলপান করা: আপনি প্রতিদিন জল খান। কিন্তু পানি খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি জানেন? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়ম মেনে পানি না খেলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়। অনেকেরই কম পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে। তাদের এই সমস্যা হতে পারে। পানি কম পান করলে প্রস্রাব কম হয় বা হতে চায় না। তারপর ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে সংখ্যাবৃদ্ধি করার সময় আছে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রস্রাবের সঙ্গে জীবাণুও বের হয়ে যায়। তাই দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করুন।

শাকসবজি: প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে সবুজ সবজির শেষ নেই। শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে। প্রতিদিনের খাবারে আমিষের পরিমাণ কমিয়ে শাকসবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাছাড়া কিছু সবুজ শাকসবজি শরীরের চিনির চাহিদাও পূরণ করে। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খান।

হট কম্প্রেস: গরম কম্প্রেস প্রস্রাবের সংক্রমণ পরিষ্কার করতে এবং পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটি গরম জলের ব্যাগ বা কাপড় গরম করে তলপেটে এবং পিঠের নিচের অংশে লাগানো যেতে পারে। এতে মূত্রাশয়ের উপর অতিরিক্ত চাপ কমবে এবং ব্যথাও অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়া, আজকাল বাজারে হিটিং প্যাড পাওয়া যায়, যা মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা উপশম করতে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ায় ভোগা মহিলারা মাসিক বা পিরিয়ডের সময় হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। তলপেটে ব্যথা উপশমের পাশাপাশি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিনারি ইনফেকশনও দূর হবে।

ডিহাইড্রেশন উপশম করুন: ডিহাইড্রেশন হল প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি না পান করলে খুব দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন হয়ে যাবে। প্রচুর পানি পান কর. প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস পানি পান করলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া খুব সহজেই দূর হবে। তাছাড়া জলযুক্ত ফল যেমন তরমুজ, আম, আপেল, আঙুর, আনারস, নাশপাতি ইত্যাদি খেলে পানিশূন্যতা কমে। তাছাড়া স্যুপ, নারকেল পানি, ফলের রস, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি খেলেও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া অনেকটাই কমে যায়।

দই: প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে দই খুবই কার্যকরী। মিষ্টি এবং টক দই উভয়েই স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে। তাছাড়া প্রতিদিন দই খাওয়া শরীরের পিএইচ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ১-২ কাপ দই রাখুন।

তাছাড়া বিভিন্ন ভেষজ যেমন নিম পাতার রস এবং চিতার রস প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া উপশম করে। এবং বিভিন্ন মশলার মিশ্রণ যেমন আদার রস এবং জিরা গুঁড়ো হালকা গরম জলের সাথে মিশিয়েও প্রস্রাবের সংক্রমণ বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া নিরাময় করতে পারে। অল্প কিছু ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই এই উপসর্গটি আরও খারাপ হওয়া থেকে বাঁচতে আজই উপরের প্রতিকারগুলি গ্রহণ করা শুরু করুন। আপনি পছন্দসই ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করুন। খুব তাড়াতাড়ি ফলাফল পাবেন।

যা পরিহার করা উচিত

>> পুষ্টিবিদদের মতে, মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে প্রক্রিয়াজাত ও জাঙ্ক ফুড খাওয়াও এড়িয়ে চলতে হবে।

>> ব্যায়াম করার সময় গিয়ার পরুন যা মূত্রনালীর চারপাশে খুব বেশি আর্দ্রতা তৈরি করবে না।

>> ব্যায়াম করার পরপরই গোসল করে শরীর মুছতে হবে।

>> ইউটিআই থেকে পরিত্রাণ পেতে জীবনযাত্রার অভ্যাসও বদলাতে হবে।

>> ইউটিআই-এ আক্রান্ত মহিলাদের প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক, আজকের নিবন্ধে আমরা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এবং আপনি নিবন্ধটি পছন্দ করেছেন। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

আরো পড়ুন:- কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা সঠিক নিয়মক্রিয়েটিনিন লেভেল কত হলে ভালো।  প্রসাবের রাস্তায় চুলকানি মলম । মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় । পেগনেট টেস্ট করার নিয়ম । কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম

Tag: প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ, প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা, proshabe jalapora goroya cikisha,  biborun.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top