ঠোঁট ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে শীতকালে বা যখন ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। ঠোঁট ফাটার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। শুকনো ঠোঁটের অন্যতম কারণ হলো শরীরে পানির অভাব। যার কারণে ঠোঁটের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই আজকের আর্টিকেলে ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে, ঠোঁটে ঘা হয় কোন ভিটামিনের অভাবে, ঠোঁটের কোণে ঘা হয় কোন ভিটামিনের অভাবে, গরমে ঠোঁট ফাটার কারণ, ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়, ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে এই সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না, তাহলে চলুন শুরু করা যাক:-
ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
ঠোঁট ফাটার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ভিটামিন বি-এর অভাব, বিশেষ করে ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) ও ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)। এই ভিটামিনগুলোর অভাব ঠোঁটের শুষ্কতা, ফাটা, ও কোণায় ক্ষত তৈরি করতে পারে। এছাড়াও, ভিটামিন বি৬ (পাইরিডোক্সিন) এবং ভিটামিন বি১২-এর অভাবও ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে।
যথাযথ পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ঠোঁট ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
পুষ্টির অভাবে ঠোঁট ফাটে
পুষ্টির অভাবে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ক্যালিফোর্নিয়ার পুষ্টিবিদ আমনদীপ কালসি বলেছেন, শক্তির মাত্রা, মস্তিষ্কের শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দৃষ্টিশক্তি, হজমশক্তি, স্নায়ুর ক্রিয়াকলাপ, হরমোন উত্পাদন, পেশীর স্বর এবং হার্টের স্বাস্থ্য – এই সবের জন্য ভিটামিন বি প্রয়োজন।
ভিটামিন বি 12 কোষের বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনের অপ্রতুলতা শুষ্ক মুখ হতে পারে। বি ভিটামিন বেশি দিন শরীরে জমা রাখা যায় না। তাই প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে এই ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা প্রয়োজন।
সূর্যালোকের দীর্ঘ এক্সপোজার
গরমে ঠোঁটের সমস্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে সূর্যের আলো। রোদে পোড়া শুধু শরীরে নয় মুখেও হতে পারে। আর মুখ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি রোদ পায়।
লিপ বামের নেশা
সবাই মনে করেন লিপবাম ঠোঁটকে আর্দ্র রাখে। কিন্তু লিপবাম আসলে ঠোঁটকে ময়শ্চারাইজ করার পরিবর্তে শুকিয়ে দিতে পারে। লিপবামের উপাদানের কারণেই এমন হয়।
ঠোঁটে ঘা হয় কোন ভিটামিনের অভাবে
ঠোঁটে ঘা (যা অ্যাঙ্গুলার চেইলাইটিস বা ঠোঁটের কোণে ক্ষত হিসেবে পরিচিত) হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) এবং ভিটামিন বি১২-এর অভাব। এছাড়াও, আয়রন, ফোলেট, এবং জিঙ্কের অভাবও ঠোঁটে ঘা বা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
যদি এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত, যেমন শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ, এবং গোশত।
ঠোঁটের কোণে ঘা হয় কোন ভিটামিনের অভাবে
ঠোঁটের কোণে ঘা হওয়ার (অ্যাঙ্গুলার চেইলাইটিস) প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন) এবং ভিটামিন বি১২-এর অভাব। এছাড়াও, আয়রন এবং ফোলেটের অভাবও ঠোঁটের কোণে ঘা সৃষ্টি করতে পারে। এই পুষ্টির অভাবে ত্বক দুর্বল হয়ে যায়, ফলে ক্ষত তৈরি হতে পারে।
এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, এবং ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ, এবং গোশত খাওয়া উপকারী হতে পারে।
গরমে ঠোঁট ফাটার কারণ
গরমের সময় ঠোঁট ফাটার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে:
- পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন): গরমের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, যা ঠোঁটের শুষ্কতা এবং ফাটার কারণ হতে পারে।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV Rays): সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ঠোঁটের ত্বক পুড়ে যেতে পারে, যা শুষ্কতা এবং ফাটার কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত ঘাম: গরমের সময় অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীরে থাকা প্রয়োজনীয় লবণ এবং খনিজ উপাদান হারাতে পারে, যা ঠোঁটের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট করতে পারে।
- এয়ার কন্ডিশনার: এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়, যা ঠোঁটের আর্দ্রতা হ্রাস করে ঠোঁট ফাটার কারণ হতে পারে।
- আদ্রতার অভাব: গরমের সময় শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়, কিন্তু যদি পর্যাপ্ত পানি পান করা না হয়, তবে ঠোঁট ফাটার ঝুঁকি বাড়ে।
এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পর্যাপ্ত পানি পান করা, ঠোঁটকে আর্দ্র রাখার জন্য ভালো মানের লিপ বাম ব্যবহার করা, এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রিনযুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুন: নারিকেল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি
ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়
ঠোঁট ফাটা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে, যা প্রাকৃতিকভাবে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে এবং ঠোঁটকে মসৃণ রাখতে সহায়তা করে:
১. নারকেল তেল
- নারকেল তেল ঠোঁটে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। শুষ্কতা দূর করে ঠোঁটকে নরম ও মসৃণ রাখতে এটি বেশ কার্যকর। দিনে কয়েকবার নারকেল তেল ঠোঁটে লাগাতে পারেন।
২. মধু এবং চিনি স্ক্রাব
- মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং চিনি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। মধু এবং চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন, এরপর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঠোঁটের মৃত কোষ দূর করে ঠোঁটকে নরম রাখে। ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে
৩. অ্যালোভেরা জেল
- অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটের ফাটল কমাতে সাহায্য করে এবং ঠোঁটকে শীতল এবং আর্দ্র রাখে। শুদ্ধ অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে লাগান এবং তা শুকিয়ে যেতে দিন।
৪. গোলাপের পাতা এবং দুধ
- কয়েকটি গোলাপের পাতা দুধে ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর পেস্ট তৈরি করে ঠোঁটে লাগান। এটি ঠোঁটকে প্রাকৃতিকভাবে নরম এবং আর্দ্র রাখে।
৫. গ্লিসারিন
- গ্লিসারিন ঠোঁটের শুষ্কতা কমিয়ে আর্দ্রতা বজায় রাখে। রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগিয়ে রাখতে পারেন।
৬. শসার রস
- শসার রস ঠোঁটে হালকা করে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ঠোঁটকে আর্দ্র রাখে এবং ফাটল কমাতে সাহায্য করে।
৭. পানি পান
- শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে।
এই ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটল কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার উপায়
ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার জন্য কিছু সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া উপায় আছে যা আপনি অনুসরণ করতে পারেন:
১. চিনি এবং মধুর স্ক্রাব
- উপাদান: ১ টেবিল চামচ চিনি, ১/২ টেবিল চামচ মধু।
- পদ্ধতি: চিনি এবং মধু মিশিয়ে ঠোঁটে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। এটি ঠোঁটের মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে এবং ঠোঁটকে মসৃণ করে তোলে। এরপর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং একটি ভালো মানের লিপ বাম লাগান।
২. টুথব্রাশ ব্যবহার
- পদ্ধতি: একটি নরম টুথব্রাশের সাহায্যে ঠোঁটের উপর হালকাভাবে স্ক্রাব করুন। এটি মরা চামড়া দূর করে এবং ঠোঁটকে মোলায়েম করে। টুথব্রাশের সাথে অল্প পরিমাণে ভ্যাসলিন বা নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৩. অ্যালোভেরা জেল
- পদ্ধতি: অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। এটি ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করতে সাহায্য করে এবং ঠোঁটকে আর্দ্র রাখে।
৪. গোলাপের পাতা ও দুধের পেস্ট
- উপাদান: কয়েকটি গোলাপের পাতা এবং ২-৩ চামচ দুধ।
- পদ্ধতি: গোলাপের পাতা দুধে ভিজিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঠোঁটে লাগান। এটি ঠোঁটকে নরম করে এবং মরা চামড়া দূর করে।
৫. লিপ বাম বা লিপ মাস্ক ব্যবহার
- শুষ্ক ও মরা চামড়া দূর করতে নিয়মিত একটি ময়েশ্চারাইজিং লিপ বাম বা লিপ মাস্ক ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমানোর আগে লিপ মাস্ক ব্যবহার করলে সকালে ঠোঁট নরম ও মসৃণ থাকবে।
৬. অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল
- অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ঠোঁটে মাখুন। এটি ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং মরা চামড়া দূর করতে সহায়তা করে।
৭. শসার রস
- শসার রস ঠোঁটে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এটি ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে এবং মরা চামড়া নরম করে তোলে।
এই উপায়গুলো নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করা সম্ভব এবং ঠোঁট আরও মসৃণ ও নরম থাকবে।
আরো পড়ুন :- যে সকল খাবারে ভিটামিন বি রয়েছে । ভিটামিন ই ক্যাপসুল অতিরিক্ত খেলে কি ক্ষতি হয়। কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে
tag: ঠোঁট ফাটে কোন ভিটামিনের অভাবে, ঠোঁটে ঘা হয় কোন ভিটামিনের অভাবে, ঠোঁটের কোণে ঘা হয় কোন ভিটামিনের অভাবে, গরমে ঠোঁট ফাটার কারণ, ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায়, ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করার উপায়, kon-vitaminer-ovabe-thot-fate, biborun.com