আজকাল বেশিরভাগ মানুষেরই দাঁতে ক্যাভিটি থাকে। যার কারণে মানুষ দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি হয়ে যাওয়া রোগে ভোগে। বিভিন্ন সময়ে আমাদের দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশন হয় যার জন্য আমাদের দাঁত সংক্রমণের ওষুধ খেতে হয়। আজকের পোস্টে আমরা দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি, দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়, এবং মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমানোর ঘরোয়া উপায় কি কি সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আজকের প্রতিবেদনটি আপনাদের উপকারে আসবে। তাহলে আর কথা না বলে চলুন শুরু করা যাক।
অনেকেই দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি সমস্যায় ভোগেন। এটি একটি সাধারণ সমস্যা কিন্তু বেশ বেদনাদায়ক এবং বিরক্তিকর। এর ফলে সাধারণত মাড়ি লাল বা গাঢ় গোলাপি রঙের হয়ে যায়। ব্রাশ করার সময় ফোলা মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। মাড়ির প্রদাহ, সংক্রমণ, অপুষ্টি, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি কারণে মাড়ি ফুলে যায়। এছাড়া ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য সেবন, সঠিকভাবে দাঁত মাজা ইত্যাদি কারণেও মাড়ি ফুলে যাওয়া। আসুন জেনে নেই মাড়ির মাংস বৃদ্ধি দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো:
দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমানোর ঘরোয়া উপায়
মাড়ির মাংস বৃদ্ধি হওয়া একটি খুব অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। কিছু ভালো লাগে না, কথা বলতে পারে না, খিটখিটে মেজাজ। দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে গাল ও ফুলে যায়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন।
লবণ পানি: মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমানোর জন্য লবণ একটি চমৎকার ঘরোয়া প্রতিকার হতে পারে। এটি মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- নরম-ব্রিস্টেড টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার পর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লবণ ঘষে নিন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এটি করুন।
- হালকা গরম পানিতে আধা বা এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমাতে দিনে দুবার এই জল দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন।
হলুদ পেস্ট
মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমানোর জন্য হলুদ পেস্ট একটি ভাল ঘরোয়া প্রতিকারও। এতে রয়েছে কারকিউমিন। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্যথা এবং ফোলা কমাতে কাজ করে।
- এক-চতুর্থাংশ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো নিন। পাউডারে সামান্য হালকা গরম পানি যোগ করে পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি পরিষ্কার আঙ্গুল দিয়ে মাংস বৃদ্ধি মাড়িতে লাগান। পাঁচ মিনিট পর আলতো করে এক মিনিট ম্যাসাজ করুন।
- কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মাংস বৃদ্ধি মাড়িতে এক থেকে দুই সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন দুবার ব্যবহার করুন।
চা গাছের তেল: অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমাতে এবং অস্বস্তি দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে দিনে দুবার মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করুন। তবে খেয়াল রাখবেন এই তেল যেন কোনোভাবেই পেটে না ঢুকে যায়। কারণ এতে পেটে নানা সমস্যা হতে পারে।
তিলের তেলের ব্যবহার: মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমাতে ও অন্যান্য মুখের সমস্যায় তিলের তেলের ব্যবহার খুবই কার্যকর। এটি একটি চেষ্টা এবং বিশ্বস্ত পদ্ধতি। এই ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি মুখের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ওরাল প্লাক দূর করতে এবং মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ তিলের তেল মুখে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অবশেষে, আপনার দাঁত ব্রাশ করুন।
টিব্যাগ: টি ব্যাগে থাকা ট্যানিন জিঞ্জিভাইটিস কমানোর ক্ষমতা রাখে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মৌখিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ফুটন্ত পানিতে একটি টিব্যাগ দুই থেকে তিন মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর বের করে ঠান্ডা করে নিন। 10 থেকে 15 মিনিটের জন্য মাংস বৃদ্ধি মাড়িতে ধরে রাখুন। এরপর হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
জোয়ান: এতে থাইমল রয়েছে যা চেতনানাশক বা উপশমকারী, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হতে পারে। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। সুগন্ধ ছাড়তে জিরার বীজ হালকাভাবে পিষে নিন। এতে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর মাংস বৃদ্ধি মাড়িতে লাগান। দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
read more: অতিপুষ্টি প্রতিরোধে কি করা উচিত । অতিপুষ্টির লক্ষণ, ফলাফল এবং প্রতিরোধ । পিরিয়ডে ব্লিডিং কম হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার কি কি । ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় । খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা । পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে
দাঁতের ব্যথার ওষুধ খাওয়ার আগে দাঁতের ব্যথার কারণ জেনে নেওয়া দরকার। নির্দিষ্ট কারণ জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
বাজারে অনেক ধরনের দাঁত ব্যথার ওষুধ রয়েছে। তবে প্যারাসিটামল হালকা দাঁতের ব্যথার জন্য খুব ভালো কাজ করে। আপনি যদি অত্যধিক ব্যথা অনুভব করেন তবে আপনার অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু দাঁত ব্যথা ট্যাবলেটের নাম নীচে উল্লেখ করা হল:
- ফ্যানামিক 250: অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অর্থাৎ 5 থেকে 18 বছর বয়সী, ব্যথা অব্যাহত থাকলে পাঁচ দিন পরপর তিন দিন ধরে দিনে দুই থেকে তিনবার নিন।
- ফেনামিক 500: দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য এটি একটি খুব ভালো ট্যাবলেট। প্রাপ্তবয়স্কদের অর্থাৎ 18 বছর বয়সীদের দিনে দুই থেকে তিনবার একটি ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। ট্যাবলেটটি তিন দিনের জন্য গ্রহণ করা উচিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: দাঁতের মাড়ি ফোলা/ দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি একটি অত্যন্ত তীব্র এবং বেদনাদায়ক ব্যথা। দাঁতের ব্যথা থেকে রেহাই পেতে উপরের কাজগুলো করবেন । দাঁতের মাড়ি ফোলার মাত্রা বেড়ে গেলে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিব। উপরে দাঁতের ব্যথার জন্য কিছু ট্যাবলেট রয়েছে। ট্যাবলেট খাওয়ার আগে আপনি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
যে সকল ভিটামিন দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখে
ভিটামিন–এ: ভিটামিন A দাঁতের মাড়িকে সুস্থ ও মজবুত রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। লাল প্রবাল মুখের মধ্যে তরল মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এসব খাবার (গাজর, মিষ্টি আলু, সবুজ শাকসবজি, আম) ভিটামিন এ সমৃদ্ধ।
ভিটামিন–সি: ভিটামিন C দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, ফুলে যাওয়া বন্ধ করে। (আমলকি, কমলা, আমড়া, পেয়ারা, লেবু, কামরাঙ্গা ইত্যাদি টক ফল) এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, যা দাঁতের মাড়িকে খুব মজবুত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন–বি: জিহ্বা ও মুখের ঘা প্রতিরোধ করে। (সবুজ সবজি, মটরশুটি, দই, ফল, মাংস) ভিটামিন বি সমৃদ্ধ।
ভিটামিন–ডি: সূর্যের আলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনD থাকে, যা শরীর ও দাঁতের মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। এ ছাড়া মাংস, মাছ, দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।
ভিটামিন–কে: রক্ত জমাট বাঁধার জন্য শরীরে ভিটামিনK প্রয়োজন এবং ভিটামিনK -এর অভাবে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়। সবুজ শাকসবজি এবং সয়াবিনে ভিটামিন কে থাকে।
সচার–আচর জিজ্ঞাসা :
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় ?
মাড়ি ফুলে যায় মূলত প্রদাহের কারণে। কিন্তু দাঁতের প্রদাহের কারণেও দাঁতের গোড়া ফুলে যেতে পারে। মাড়ি ফুলে গেলে মাড়ি লাল বা গোলাপি রঙের হবে। এই সমস্যাটিকে অ্যাবসেস বলা হয়। ফোলার ক্ষেত্রে, জায়গাটি ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। অনেক সময় ফোলা জায়গা থেকেও পুঁজ বের হয়।
দাঁতের মাড়ি কেন ফুলে যায় ?
এই সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া সাধারণত অপুষ্টি, ওরাল ইনফেকশন, দাঁতের যত্নের অভাব, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে এবং দাঁতের মাড়িতে অনেক ধরনের রোগ দেখা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হল মাড়ি ফুলে যাওয়া। আবার মাংসের হাড় বা শক্ত আখের মতো শক্ত খাবার চিবিয়ে খেলে দাঁতের গোড়া ভেঙ্গে যেতে পারে, ফলে একই রকম ফুলে যায়।
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি কি সমস্যা হতে পারে ?
দাঁতের প্রদাহজনিত রোগ, যদি দীর্ঘ সময় ধরে চিকিত্সা না করা হয় তবে দাঁতের গোড়ায় ফুলে যায়। কখনও কখনও পুঁজ বের হয় এবং প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। তাছাড়া এ ধরনের সমস্যার কারণেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
দাঁতের মাড়ি ফোলা প্রতিকার ?
পিরিওডন্টাল ফোলা পেরিয়াপিকাল ফোলার চেয়ে কম বিপজ্জনক। একটি পেরিয়াপিকাল ফোলা যদি সময়মতো চিকিত্সা না করা হয় তবে এটি আশেপাশের এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এটি প্রায়ই লুডভিগের এনজাইনা হতে পারে।
শেষ কথা:
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি, দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়, এবং মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমানোর ঘরোয়া উপায় কি কি ইত্যাদি সকল বিষয় আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। আশা করি বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এবং আপনি নিবন্ধটি পছন্দ করেছেন। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
read more: অতিপুষ্টি প্রতিরোধে কি করা উচিত । অতিপুষ্টির লক্ষণ, ফলাফল এবং প্রতিরোধ । পিরিয়ডে ব্লিডিং কম হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার কি কি । ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় । খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা । পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান
Tag: দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি, দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়, মাড়ির মাংস বৃদ্ধি কমানোর ঘরোয়া উপায়, dater marir mabgsho biddi komano upay , biborun.com