দাঁতের গর্ত ও দাঁতের মাড়ি ক্ষয় নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। আমরা সবাই জানি যে প্রতিদিন সকালে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করা জরুরি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের গর্ত, মাড়ির ব্যথা ইত্যাদি নানা সমস্যা থেকে যায়।

গবেষকরা বলেছেন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, খনিজ পদার্থের অভাব, খাবারে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ইত্যাদি কারণে দাঁতের গর্ত ও দাঁতের মাড়ি ক্ষয়ের সমস্যা হয়। আজকে আমরা দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়, দাঁতের ইনফেকশনের ঔষধ ও দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে এই নিবন্ধনে আলোচনা করব। আশা করি প্রতিবেদনটি আপনাদের উপকারে আসবে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক:

দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায়

দাঁতের মাড়ি ক্ষয় হয়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম ব্যথা ও মাড়ি ফোলা সমস্যা। তাই মাড়ি সুস্থ রাখতে আগে থেকেই দাঁতের যত্ন নিতে হবে। কিন্তু দাঁতের ক্ষয় হলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া প্রতিকার জেনে নিতে পারেন এবং দাঁতের ক্ষয় রোধে ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চললে ইনশাআল্লাহ দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে পারবেন। দাঁতের ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া প্রতিকার নিচে দেওয়া হল।

 করণীয়: দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করতে সুপারি, চুন এবং জর্দা খাওয়া এড়িয়ে চলুন, অতিরিক্ত ধূমপান এড়িয়ে চলুন, তিন মাসের বেশি একটি ব্রাশ ব্যবহার করবেন না এবং নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন, ব্রাশ করার সময় খুব বেশি চাপ না দেওয়ার যত্ন নিন। এই নিয়মগুলো মেনে দাঁত ব্রাশ করলে আপনি দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে পারবেন। আমি আশা করি আপনি আপনার মাড়ি সুস্থ রাখতে দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অনুসরণ করবেন।

দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়

দাঁত যেমন আমাদের সৌন্দর্য বাড়াতে পারে, তেমনি তা কমাতেও পারে। সঠিকভাবে যত্ন না নিলে দাঁতের নানা সমস্যা হতে পারে। দাঁতের গর্ত তার মধ্যে অন্যতম। বয়সের সাথে সাথে দাঁতের গর্ত হয়। এমনকি, অনেক শিশুই দাঁতের গর্ত এবং দাঁতের ক্ষয় ভুগে থাকে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়ে কিছুটা হলেও কমানো যায়। কিভাবে? আসুন জেনে নেই:

দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো

• দিনে দুবার ব্রাশ করুন এবং ব্রাশ করার পর আপনার মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন
• মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন
• ডায়েট থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন
• লিভারের সমস্যায় দাঁত ক্ষয় হতে পারে, লিভারের সমস্যা থাকলে চিকিৎসা নিন
• অতিরিক্ত মশলাদার খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরনের খাবার বেশি অ্যাসিডিটির সৃষ্টি করে। আর এই অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয়ের অন্যতম কারণ
• ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ মাউথওয়াশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। এতে দাঁতের মাঝে জীবাণু কম জন্মাবে। ব্রাশ করার পরপরই ধুয়ে ফেলুন।
• পুষ্টিকর খাবার খান। দাঁতের কোনো সমস্যাকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

দাঁতের গর্ত দূর করাতে করণীয়

পেঁয়াজ:নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা কমে। দাঁতের গর্ত লক্ষ্য করলে এক টুকরো পেঁয়াজ দাঁতে চেপে ধরুন। এটি সেখানে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুকে মেরে ফেলবে। দাঁতের ক্ষয়ও কমে যাবে।

হলুদ: দাঁতের গর্ত ও মাড়ির সমস্যা জন্ডিস কমাতে পারে। হলুদ বিভিন্ন জীবাণুও ধ্বংস করতে পারে। ফলে দাঁতের গর্ত দূর করাতে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। হলুদের গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় পেস্ট লাগান। সমস্যা কমবে।

লবণ: আগে বলা হতো নুন ও তেল মিশিয়ে দাঁত মাজতে হবে। এটি দাঁতের ক্ষয় কমায়। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এবার সেই জলে মুখ ভরে নিন। লবণ পানি মুখে লাগিয়ে রাখুন এক মিনিট। তারপর ড্রেন এবং ফেলে দিন। এতে দাঁতের গর্ত দূর ও দাঁতের ক্ষয় কমে যাবে।

রসুন: রসুনে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দাঁতের পোকা দূর এবং দাঁতের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। শুধু রসুনের সাথে লবঙ্গ পিষে তাতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে সরাসরি আক্রান্ত দাঁতে লাগান। প্রয়োজনে আপনি এই প্রতিকারটি দিনে 2-3 বার করতে পারেন।

নিম ডাল: এক টুকরো নিম ডাল নিন এবং এর পাতা মুছে ফেলুন, তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ডালটি ধুয়ে ফেলুন। তারপর এই ডালের উপরের অংশ চিবিয়ে একটু নরম করে নিন। যখন এই অংশটি নরম হয়ে যায় এবং ব্রাশের মতো দেখাতে শুরু করে, তখন এটি আপনার দাঁতে 10-15 মিনিটের জন্য ঘষতে থাকুন। তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হবে।

হিং গরম : হিং গরম করে দাঁতে লাগালে দাঁতের জীবাণু নষ্ট হয়। মানসাগঠ শিকার মুখে দিলে পোকা মারা যায়। আপনি ঘরে বসেই দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

নারকেল তেল: ক্যাভিটি থেকে মুক্তি পেতে আপনি নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি এক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল নিয়ে মুখে লাগান। এবার এই তেলটি প্রায় ১০ মিনিট মুখে ঘষে তারপর ধুয়ে ফেলুন। তারপর যথারীতি ব্রাশ করুন। আপনি চাইলে ব্রাশ করার পর দাঁতের মাঝে ফ্লসও করতে পারেন।

লিকোরিস রুট: দাঁতের পোকা থেকে মুক্তি পেতে আপনি লিকোরিস রুটও ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য এক টুকরো লিকোরিস রুট নিয়ে এর গুঁড়া তৈরি করুন। তারপর এই পাউডার দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ব্রাশ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বিভিন্ন কারণে দাঁতের গর্ত দূর হয়। তবে মুখ পরিষ্কার রাখলে এই ক্ষয় ও দাঁতের গর্ত দূর কমে যায়। দিনে দুই থেকে তিনবার দাঁত ব্রাশ করা, জিভ পরিষ্কার রাখা- এই নিয়মগুলো মেনে চললেও দাঁতের ক্ষয় কমে যায়।

ডেন্টিস্টের কাছে যান: সঠিক দাঁতের যত্নের জন্য ডেন্টিস্টের কাছে যান। অন্তত প্রতি ছয় মাসে আপনার ডেন্টিস্টের কাছে যান এবং আপনার দাঁতের কোনো সমস্যা থাকলে অবিলম্বে আপনার ডেন্টিস্টকে বলুন। বছরে একবার একজন পেশাদার রেজিস্টার্ড ডেন্টাল হাইজিনিস্ট দ্বারা আপনার দাঁত পরিষ্কার করুন।

সর্বদা দাঁতের গর্ত বা মাড়ির রোগের লক্ষণগুলি পরীক্ষা করুন। ব্রাশ এবং ফ্লস করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আপনি আপনার ডেন্টিস্ট এবং ডেন্টাল হাইজিনিস্টের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। দাঁতের সঠিক যত্নের জন্য এখানে কিছু করণীয় রয়েছে:

1. প্রতি তিন মাসে আপনার টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন।
2. প্রতিদিন দুধ পান করার চেষ্টা করুন, এটি আপনার ক্যালসিয়াম বাড়ায়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
3.  টুথব্রাশ এমন হওয়া উচিত যাতে সহজেই মাড়ির দিকে বাঁকানো যায়।
4. একটি ছোট বৃত্তাকার গতিতে আপনার দাঁতের মাড়ির লাইনের ভিতরে, বাইরে, উপরে এবং নীচে ব্রাশ করুন। কোমল পানীয় পান করার অভ্যাস করুন এবং চিনিযুক্ত খাবার আপনার দাঁত থেকে দূরে রাখুন।

Read more: দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায়। অতিপুষ্টির লক্ষণ, ফলাফল এবং প্রতিরোধ । পিরিয়ডে ব্লিডিং কম হওয়ার কারণ কি । ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় । খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা । পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান 

দাঁতের ইনফেকশনের ঔষধ

দাঁতের ব্যথার ওষুধ খাওয়ার আগে দাঁতের ব্যথার কারণ জেনে নেওয়া দরকার। নির্দিষ্ট কারণ জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। বাজারে অনেক ধরনের পোকা দাঁতের ব্যথা কমানোর ঔষধ রয়েছে। তবে প্যারাসিটামল হালকা দাঁতের ব্যথার জন্য খুব ভালো কাজ করে। আপনি যদি অত্যধিক ব্যথা অনুভব করেন তবে আপনার অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু পোকা দাঁতের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেটের নাম নীচে উল্লেখ করা হল:

ফ্যানামিক 250: অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অর্থাৎ 5 থেকে 18 বছর বয়সী, ব্যথা অব্যাহত থাকলে পাঁচ দিন পরপর তিন দিন ধরে দিনে দুই থেকে তিনবার নিন।

ফেনামিক 500: দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য এটি একটি খুব ভালো ট্যাবলেট। প্রাপ্তবয়স্কদের অর্থাৎ 18 বছর বয়সীদের দিনে দুই থেকে তিনবার একটি ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। ট্যাবলেটটি তিন দিনের জন্য গ্রহণ করা উচিত।

দাঁত ব্যাথার ট্যাবলেট এর নাম

দাঁত ব্যথার নিম্নে আরো কিছু ট্যাবলেট  এর নাম উল্লেখ করা হলো:

• Tory 120mg
• Amodis 400
• Algirex 120mg
• Ecox 120mg
• Exilok 20
• Torimon 90mg
• Moxacil 500
• Cox-E 120mg
• Aroxia 12p mg

দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক

দাঁতের ব্যথার জন্য আপনি Etoricoxib 60mg Etoricoxib 120mg বা Etoricoxib 90mg বা ট্যাবলেট নিতে পারেন যদি আপনার পোকা দাঁতের ব্যথা থাকে তবে আপনি এই ওষুধটি তখনই নিতে পারেন যখন আপনার পোকা দাঁতের ব্যথা হয়। যদি এই ওষুধগুলো ভালো কাজ না করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও আরও অনেক ধরণের ব্যথানাশক রয়েছে যা দাঁতের ব্যথার জন্য নেওয়া যেতে পারে তবে এই ব্যথানাশকগুলি খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন নিবন্ধিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোকা দাঁতের ব্যথা একটি অত্যন্ত তীব্র এবং বেদনাদায়ক ব্যথা। পোকা দাঁতের ব্যথা থেকে রেহাই পেতে উপরের কাজগুলো করবেন । পোকা দাঁতের ব্যথার মাত্রা বেড়ে গেলে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিব। উপরে দাঁতের ব্যথার জন্য কিছু ট্যাবলেট রয়েছে। ট্যাবলেট খাওয়ার আগে আপনি একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়, দাঁতের ইনফেকশনের ঔষধ ও দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি সকল বিষয় আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। আশা করি বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এবং আপনি নিবন্ধটি পছন্দ করেছেন। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

Read more: অতিপুষ্টি প্রতিরোধে কি করা উচিত । অতিপুষ্টির লক্ষণ, ফলাফল এবং প্রতিরোধ । পিরিয়ডে ব্লিডিং কম হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার কি কি । ঠোঁট ফাটা কমানোর ঘরোয়া উপায় । খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা । পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের স্লোগান 

TAG: দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়, দাঁতের ইনফেকশনের ঔষধ, দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করার ঘরোয়া উপায়, dater gorto dur korar goroya upay, biborun.com