বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়, বাচ্চাদের বুকে কফ জমে, শ্বাসকষ্ট হয়, তারপর কান্নাকাটি করে। কফ ও কাশির কারণে ঘুমাতে পারেন না। এদিকে সন্তানের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় অভিভাবকদেরও। আবার অনেকের মনে এরকম করতে থাকে যে শিশুর বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত। এই সমস্যার সমাধান পেতে অনেক অভিভাবক চিকিৎসকের কাছে যান এবং শিশুকে উচ্চ-অ্যান্টিবায়োটিক ও ঠান্ডার ওষুধ দেন। তবে এসব হালকা বিষয়ে শিশুকে শক্তিশালী ওষুধ না দেওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিতে শিশুর বুকে জমে থাকা কফ দূর করতে পারেন।
প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের শিশুদের সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলে আমরা শিশুদের বুকের কফ কেন হয় এবং শিশুর বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন। তো চলুন নিবন্ধটি শুরু করা যাক:-
শিশুর বুকে কফ কেন হয়
ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমাদের শরীরে জ্বর সর্দি বা সর্দি কাশি হয়। পরবর্তীতে ঠান্ডায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে ঠাণ্ডার কারণে আমাদের অনেকের বুকে কফ হয়। অন্যদিকে, অনেকেই আছেন যাদের কফ সহজেই বের হয়ে যায় এবং কিছুদিন পর চলে যায়।
শিশুর বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত
সর্দিতে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এমনকি বুকে কফ জমে। এ সময় শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। শীতের সর্দি-কাশি থেকে শিশুদের বাঁচাতে অনেকেই উচ্চ মাত্রায় ওষুধ দিয়ে থাকেন। ওষুধ শিশুদের উপর খুব প্রতিক্রিয়াশীল। আপনি যদি চান, আপনি প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া প্রতিকার দিয়ে শিশুর কফ এবং ঠান্ডা নিরাময় করতে পারেন।
**এক চামচ মধু ও লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়ান। এটি আপনার শিশুকে শিথিল করবে।
**সর্দি, জ্বর হলে ঘুমানোর সময় শিশুর মাথা কিছুটা উঁচু করে রাখুন। এতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস অনেক সহজ হবে।
**ঠান্ডায় শিশুকে টমেটো এবং রসুনের স্যুপ খাওয়াতে পারেন। এটি শরীরের পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কফ গলিয়ে শিশুকে উপশম করবে।
**একটি বাটি গরম জল নিন এবং এটি দিয়ে শিশুকে স্টিম করুন। বাচ্চাকে এভাবে কিছুক্ষণ রাখুন। গরম পানি শিশুর নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করে।
**সর্দি-কাশি হলে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের গোসল করতে চান না। এটা ঠিক নয়, শিশুকে প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে গোসল করাতে হবে। ঠাণ্ডা বুকে বসতে পারে না।
**মধু, বুকে সর্দি বা কনজেশনের সমস্যায় মধু ও তুলসি পাতার চেয়ে ভালো খাবার আর নেই। মধু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে কফের সাথে লড়াই করে। এক্ষেত্রে প্রতি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় এক টেবিল চামচ মধু খাওয়া উচিত যতক্ষণ না সমস্যা পুরোপুরি সেরে যায়। তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু খাওয়া উচিত নয়।
**জীবাণুর কারণে আপনার শিশুর সর্দি হয়। সে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এই সময়ে শিশুর পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। এটি শরীরকে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দেয়।
**সর্দি থেকে দ্রুত উপশম পেতে শিশুকে নাকের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। আপনি চাইলে বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন এই ড্রপ। একটি পাত্রে আধা চা চামচ লবণ দিয়ে 4 চা চামচ গরম পানি ফুটিয়ে নিন। এটি ঠান্ডা হয়ে গেলে নাকের ড্রপ হিসাবে ব্যবহার করুন।
**রসুনের 2 কোয়া এবং মৌরি 1 টেবিল চামচ ভাজুন। এবার এই মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে একটি বল বানিয়ে শিশুর ঘুমানোর জায়গায় রাখুন। এটি গরম হয়ে যায় এবং তা থেকে নির্গত বাষ্প শিশুর নাক বন্ধ করে দেয় এবং কফ চলে যায়। রসুন এবং মৌরিতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য, যা শিশুর সর্দি নিরাময়ে সাহায্য করে।
**হালকা গরম পানিতে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে অল্প পরিমাণে শিশুকে খাওয়ান। এই পানীয় শিশুকে আরাম দেয়। এ ছাড়া লেবুর পরিবর্তে গরম পানিতে মধু ও দুই টুকরো লবঙ্গ মিশিয়ে সেই পানি শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
**দুই কোয়া রসুন ও ১ টেবিল চামচ মৌরি ভেজে নিন। এই মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে একটি বল বানিয়ে শিশুর ঘুমানোর স্থানে রাখুন। এটি গরম হয়ে যায় এবং এটি থেকে নির্গত বাষ্প শিশুর নাক বন্ধ করে দেয়। এই বাষ্প শিশুর বুকে জমে থাকা কফ দূর করে।
**ঠাণ্ডা, জ্বর একটু বেশি হলে শিশুর বালিশ তুলুন। এটি শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস সহজতর করবে। শিশুর বিছানা পরিষ্কার রাখুন।
**প্রয়োজনীয় তেল: অপরিহার্য তেলের বাষ্প শিশুর শ্বাসনালী থেকে কফ অপসারণ করতে এবং তাদের পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এই তেলটি শ্বাসতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও লড়াই করে (কিভাবে বুকে শ্লেষ্মা থেকে মুক্তি পাবেন)। এই তেল বিভিন্ন খাদ্য পণ্য থেকে তৈরি করা হয়। যেমন দারুচিনি, পিপারমিন্ট, তুলসী, থাইম, চা গাছ ইত্যাদি। এই তেল একটি বোতলে রেখে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া যেতে পারে। তবে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি ছোট বাচ্চার জন্য গ্রহণ করা যায় কি না তা ডাক্তারই বলবেন।
**হিউমিডিফায়ার: বুকে কফ জমে থাকলে ডাক্তার তা তরল রাখার চেষ্টা করেন। এই কারণেই অনেক ডাক্তার হিউমিডিফায়ার (শিশুদের জন্য প্রাকৃতিক ঠান্ডা প্রতিকার) ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই ডিভাইসটি ঘরের পরিবেশকে আর্দ্র রাখে। ঠান্ডার পাশাপাশি শুষ্ক আবহাওয়ায় শিশুর শ্বাসনালীতে সহজেই কফ বা শ্লেষ্মা জমতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে এই ডিভাইসটি ব্যবহার করলে তা ঘরের ভেতরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এতে শিশুর শ্বাসকষ্টও কমে যায়।
**শীতকালে নিয়মিত কালোজিরার তেল দিয়ে শিশুর হাত-পা ম্যাসাজ করুন। শিশুর গলা ও নাকে সামান্য কালোজিরার তেল লাগাতে পারেন। এছাড়া এই তেল অল্প পরিমাণে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। সর্দি-কাশির চিকিৎসায় কালোজিরার তেল খুবই কার্যকরী।
**বাচ্চাকে পেয়ারা, টমেটো এবং রসুনের স্যুপ খাওয়াতে পারেন। এতে আপনার শিশুর বুকে জমে থাকা কফ মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে আসবে।
**শিশুর অবরুদ্ধ নাকে দুই ফোঁটা লবণ পানির মিশ্রণ দিন। এতে বন্ধ নাক দ্রুত খুলে যাবে। ফলে শিশু আরাম বোধ করবে। এর জন্য একটি পাত্রে আধা চা চামচ লবণ দিয়ে ৪ চা চামচ গরম পানি ফুটিয়ে নিন। একবার ঠাণ্ডা হয়ে গেলে, এটি অনুনাসিক ড্রপ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
** শীতকালে শিশুকে গোসল করতে সবসময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। গরম পানিতে গোসল করলে শিশুর ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি কমে যায়।
শেষ কথা:
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা শিশুদের বুকের কফ কেন হয় এবং শিশুর বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এবং আপনি নিবন্ধটি পছন্দ করেছেন। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আপনার মূল্যবান প্রশ্নের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন :- বুকের কফ বের করার সিরাপ । গলায় কফ আটকে থাকলে কি করনীয় । বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধ । ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা সঠিক নিয়ম । বাচ্চাদের কাশির ঔষধের নাম প্রসাবের রাস্তায় চুলকানি মলম । মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় । পেগনেট টেস্ট করার নিয়ম । কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম
Tag: শিশুদের বুকের কফ কেন হয়, শিশুর বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত, sishuder buke kof jomle ki oushud khaoya uchit, biborun.com